বিশ্ববাজারে দাম কমায় বাণিজ্য সচিবের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ৬ টাকা কমানো হয়। ২৬ জুন এই দাম কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। যা ২৭ জুন থেকে কার্যকরের কথা ছিল। তবে ঘোষণার ১৭ দিন পার হলেও লিটারে ৬ টাকা কমানো হয়নি। বিক্রি হচ্ছে সেই বাড়তি দরেই।
বুধবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি লিটার বোতল সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ২০০-২০৫ টাকা। সরকারের নির্ধারিত দর ১৯৯ টাকা। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটারের দাম ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা।
রাজধানীর নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. শাকিল বলেন, তেলের দাম নাকি কমানো হয়েছে। কোথায় কমানো হয়েছে? দোকানে সেই আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে। আমাদের সেই বাড়তি দরেই কিনতে হচ্ছে। দোকানদারদের কাছে জানতে চাইলে বলছেন-নিলে নেন, না নিলে চলে যান। দেখার যেন কেউ নেই।
একই বাজারে মুদি বিক্রেতা মো. তুহিন বলেন, ঈদের আগের সপ্তাহেও ২০৫ টাকা দরে তেল বিক্রি করতে দিয়েছে। কোম্পানির কাছে যে রেটে পণ্য পাব সেই দামেই বিক্রি করব। কারণ আমাদেরও টাকা দিয়ে তেল কিনে বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, বেশি দামে কিনে কেন লস দিয়ে কম দামে বিক্রি করব। যখন কম দামে কোম্পানি তেল দেবে, তখন কম দামে বিক্রি করব। এদিকে কোম্পানি বা পরিবেশক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাম কম বা বেশি যাই হোক খুচরা পর্যায়ে প্রভাব পড়তে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লাগে। উৎপাদনের পর ডিপোতে যায়। সেখান থেকে বিক্রয় কেন্দ্রে। পরে বিভিন্ন খুচরা দোকানে পৌঁছাতে সময় লাগে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সুফল পেতে ক্রেতার প্রায় দেড় মাস অপেক্ষা করতে হবে। জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যখনই আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশে দাম বাড়ানো হয়, ঠিক তখনই সেই দোহাই দিয়ে বিক্রেতারা সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। কিন্তু যেদিন দাম কমানো হয়, ঠিক সেদিনই দাম কমানো হয় না। তখন বিক্রেতাদের অজুহাত বেশি দামে কেনা তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
পাশাপাশি তারা আরও বলে, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও সেই পণ্য আসতে অনেক দিন সময় লাগে তাই বাড়তি দরেই বিক্রি করতে হবে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, যেদিন দাম বাড়ানো হয় সেদিন কেন বেশি দামে বিক্রেতারা পণ্য বিক্রি করে? এটা এক ধরনের প্রতারণা। আর এই প্রতারণার বিরুদ্ধে সরকারের কোনো সংস্থা যথাযথ ব্যবস্থা নেয় না। সে জন্যই ক্রেতারা সব সময় প্রতারিত হন। এ অবস্থা থেকে ক্রেতাদের বের করে আনতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, তেলের দাম নতুন করে কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সব স্থানে সেই নতুন দামে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না তা আমরা খতিয়ে দেখছি। তদারকির মাধ্যমে মূল্য পরিস্থিতি ঠিক করা হচ্ছে।
২৬ জুন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম মোলা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৭ জুন থেকে প্রতি লিটার বোতল সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে ১৯৯ টাকায়। যা আগের দাম ছিল ২০৫ টাকা। পাশাপাশি এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮০ টাকা। যার পূর্বের মূল্য ১৮৭ টাকা। এছাড়া ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হবে ৯৮০ টাকায়। যা আগের মূল্য ১০২৫ টাকা।